কুষ্টিয়ায় মা হলেন ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রী: ডিএনএ পরিক্ষা সম্পন্ন ॥ পিতৃ স্বীকৃতির অপেক্ষায়


সময়েরদিগন্ত.কম ॥ কুষ্টিয়ার মিরপুরে ধর্ষনের কারনে অন্তঃসত্বা হয়ে পড়া মিরপুর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রীর পুত্র সন্তান গত ১৯ জুলাই তারিখে কুষ্টিয়ার সদর হাসপাতালে ভূমিষ্ট হয়েছে। এইরকম সংকটকালীন মূহুর্তে চরম অসহায় পরিবারের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন মিরপুর থানায় এসআই সালাউদ্দিন খান। তিনি এই ধর্ষন সংক্রান্ত মামলার তদন্তকারী অফিসার। এদিকে স্বাভাবিক কারনেই ভূমিষ্ট সন্তানের পিতৃ পরিচয় বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে সমাজের কাছে। ধর্ষক ওসমান হামারাকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সম্পন্ন হয়েছে তার ডিএনএ পরীক্ষাও। ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলের রিপোর্টের উপরে নির্ভর করছে নব জাতকের পিতৃ পরিচয়। ধর্ষিতা মিরপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। মিরপুর উপজেলার খন্দকবাড়িয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী ধর্ষক ওসমান ওরফে হামারা কর্তৃক ধর্ষনের শিকার হয়ে ভিকটিমের ৫ মাসের অন্তঃসত্বা অবস্থায় বিষয়টি আজ থেকে প্রায় তিন মাস পূর্বে সবার নজরে আসে। এইরুপ শোচনীয় অবস্থায় নিপতিত হওয়া একটি নারী ও তার পরিবারের জন্য সামাজিকভাবে বৈরী পরিবেশের সৃষ্টি করে এবং আমাদের সমাজে সেটাই স্বাভাবিক। একদিকে ভূমিষ্ট শিশুর পিতৃ পরিচয় অন্যদিকে আর্থিক দৈন্য ধর্ষিতা এবং তার পরিবারের জন্য শনির দশার মতই অনাকাংখিত ও বিপজ্জনক । এই অবস্থায় ভিকটিমের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে ভিকটিমকে হাসপাতালে ভর্তি করা থেকে শুরু করে ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যোগান দিয়ে সংবাদ কর্মীদের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষনে সক্ষম হন মিরপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক সালাউদ্দিন। ভিকটিমকে শুধু চিকিৎসা সেবার বন্দোবস্ত করে দেবার মধ্যেই তিনি নিজের দায়িত্বকে সীমিত করে ফেলেননি। সামাজিকভাবে যাতে মেয়েটি বিরুপ পরিবেশের মুখোমুখি না হয় সেদিকেও তার উদ্যোগ সংবাদ মাধ্যমের নজরে আসে। গত মার্চ মাসের ৩১ তারিখে মিরপুর থানাধীন সাহাদালী ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে আল্ট্রসনোগ্রাফিতে ভিকটিমের অন্তঃস্বত্তার বিষয়টি জানা যায়। রিপোর্ট অনুযায়ী ভিকটিম তখন ২৫ সপ্তাহের অন্তঃস্বত্তা বলে জানা যায়। এই ঘটনার পর ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংবাদটি ভাইরাল হতে দেখা যায়। ভিকটিমের মা ঘটনার জন্য ওসমান হামারা (৬০) কে আসামী করে থানায় মামলা করেন। মিরপুর থানার ওসি আবুল কালামের নির্দেশে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল আলীম এবং এসআই সালাউদ্দিন সঙ্গীয় ফোর্সসহ অভিযান চালিয়ে সুদুর নওগাঁ থেকে আসামী হামারাকে গ্রেপ্তার করেন। বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে আসামী হামারার ডিএনএ পরীক্ষা ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করা হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল রিপোর্টের উপর নির্ভর করছে নবাগত শিশুর পিতৃ পরিচয়। এদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয় পড়ুয়া ধর্ষিতা বালিকার সন্তান পৃথিবীর আলো-বাতাসের মুখ দেখার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। হাসপাতালে নবজাতক ও তার মা সুস্থ্য রয়েছেন। মিরপুর থানার মামলা নম্বর ১ তারিখঃ ০১/০৪/১৯ এর এজাহার সূত্রে জানা যায় গত ইং ২২/০৯/১৮ তারিখ সন্ধ্যা ০৭.০০ ঘটিকার সময় আসামী মোঃ ওসমান হামারা মামলার বাদীনির অনুপস্থিতিতে তার মেয়েকে ফুঁসলিয়ে তার ঘরে নিয়ে গিয়ে জোর পূর্বক ধর্ষন করে। একারনে পরবর্তীতে সে সন্তান সম্ভবা হয়ে পড়ে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এ্সআই সালাউদ্দিন খান জানান, তিনি মামলাটি তদন্ত করছেন। মামলা তদন্তের পাশাপাশি মানবিক বিষয়গুলোর প্রতিও তিনি ও তার ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণ খুবই গুরুত্ব দিয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে ভিকটিমকে হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যায়ভার তিনি ব্যক্তি উদ্যোগে বহন করেছেন। ভিকটিম ও নবজাতকের বিষয়ে নিয়মিত খোজ খবর নিয়ে চলেছেন। এটি একটি তদন্তধীন মামলা। সত্যিকার অর্থে ডিএনএ রিপোর্টের উপরেই এই মামলার ভাগ্য এবং নবজাতকের পিতৃ পরিচয় নির্ভর করছে। ভিকটিমের মা এই প্রতিবেদককে জানান, ঘটনাটি ঘটার পর এলাকায় আমাদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়। আমরা সমাজে মুখ দেখাতে পারছিলাম না। এই অবস্থায় দারোগা সাহেব আমাদের এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকে আমাদের সমস্যার বিষয়ে বলে যান। দারোগা সাহেবের কথামত আমাদেরকে নিয়ে কেউ হাসি-ঠাট্রা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেনি। আমাদের চরম দূঃসময়ে পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করেছেন এই সালাউদ্দিন সাহেব। আমরা তার জন্য দোয়া করি। এদিকে অবর্ণনীয় প্রতিকুল পরিবেশ ধর্ষিতার পরিবারের জন্য এক মহা বিপর্যয়। এসআই সালাউদ্দিনের মত আর কেউকি আছেন যারা আর্ত মানবতার পাশে দাঁড়িয়ে এই পরিবারটির বিপদ থেকে উত্তোরণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবেন আমরা জেলা প্রশাসক, সংশ্লিষ্ট উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সম্ভব হলে জটিল এই সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যার দিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাই।
Leave a Reply