“জাতির মেরুদন্ড নিজেই হারাতে বসেছে তার মেরুদন্ড”


নাহিদ হাসান তিতাস : করোনার প্রভাবে দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ রয়েছে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মুখ থুবড়ে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা। সরকারের পক্ষ থেকে তা পোষানোর জন্য সরকারী টেলিভিশন ও অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থা সচল রাখার চেষ্টা চালানো হচ্ছে অবিরাম। যদিও বাংলাদেশের মতো নব্য উন্নয়নশীল দেশে সেটা কতটুকু সাফল্য বয়ে আনতে পারে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। যে দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো ঠিকমতো প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগেনি, এমনকি বিদ্যুৎ ব্যবস্থারও রয়েছে ঘাটতি। সে দেশে অনলাইন ক্লাস ব্যবস্থা উচ্চাবিলাশী ছাড়া আর কিছুই নয়।
বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, অনলাইন ক্লাসে ১০০% শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৪% অনলাইন সুবিধার আওতায় রয়েছে। বাকি ৫৬% শিক্ষার্থীই রয়েছে এ ব্যবস্থার বাইরে। তাই অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা মৌলিক অধিকার শিক্ষার ক্ষেত্রেও ধনী-গরীব বৈষম্যের সৃষ্টি করছে। যা একটি গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কাম্য নয়।
করোনায় দেশে মিটিং, মিছিল, সভা-সমাবেশ, গনজমায়েত, বাজার, শপিং সেন্টার, গনপরিবহন, সিনেমা হল সহ সবকিছুই চলছে আগের নিয়মে আপন গতিতে। শুধু থেমে আছে জাতির মেরুদন্ড। সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি দেখানো হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিতে না ফেলতেই বন্ধ রাখা হয়েছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে কি? মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা শিক্ষার্থী নয়? কারণ করোনা মহামারীর মধ্যেই পাঠকার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে দেশের মাদ্রাসাগুলো। আবার শাহবাগে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি আন্দোলনেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিলো সরব। সামনে থেকে শিক্ষার্থীরাই এসব আন্দোলনের নেতৃত্বে দিয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত মাদ্রসা বা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনা সংক্রমনের প্রার্দূভাব ঘটেছে এমন খবর পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, পিতা মাতাকে বাইরে বেরুতে দিয়ে শিক্ষার্থীকে ঘরে রেখে কতটুকু করোনা ঝুঁকি এড়ানো যাচ্ছে, সেটা নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। যদিও অস্বীকার করা সুযোগ নেই, শিক্ষার্থীরাই এ দেশের ভবিষ্যৎ, আগামীর উন্নত বাংলাদেশ। তবুও বলতে হয়, শিক্ষা ব্যবস্থা থমকে গেলে থমকে যাবে আগামীর ভবিষ্যৎ।
যে দেশে ২০কোটি জনগোষ্ঠির মধ্যে প্রায় ৭/৮ কোটি মানুষ শিক্ষা পেশার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে দেশের অর্থনৈতিক সচল করার পরিকল্পনা শুধু স্বপ্ন দেখে ছাড়া আর কিছু নয়। দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। ফলে ঘরবন্ধী শিক্ষার্থীরা ভুগতে শুরু করেছে মানসিক বিষন্নতায়। যা শিক্ষার্থীদের উপরে পড়তে পারে দীর্ঘমেয়াদী বিরুপ প্রভাব। এভাবে চলতে থাকলে বেসরকারী উদ্যোগে পরিচালিত শিক্ষাব্যবস্থা নামবে ধ্বস। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হবে দেশ ও জাতি। মনে রাখতে হবে, শিক্ষাব্যবস্থা বন্ধ রেখে কখনোই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই এ সংকটকে সামনে থেকে মোকাবেল করে দেশে মেরুদন্ডকে আরো শক্তিশালী করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করা অতীব জরুরী।
তা না হলে, জাতির মেরুদন্ড শিক্ষা নিজেই হারাবে তার মেরুদন্ড।
Leave a Reply